অনুসন্ধান ফলাফলগুলি - Hoover, Herbert, 1874-1964
হার্বার্ট হুভার
thumb|প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভার হার্বার্ট ক্লার্ক হুভার (১০ আগস্ট, ১৮৭৪ – ২০ অক্টোবর, ১৯৬৪) ছিলেন আমেরিকার একত্রিশতম প্রেসিডেন্ট। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ – এই চার বছর তিনি রাষ্ট্রের হাল ধরেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি ছিলেন বিত্তবান খনি প্রকৌশলী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বেলজিয়ামে ত্রাণ সাহায্য সংস্থার নেতৃত্ব দেন তিনি, আর যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য বিভাগেরও ডিরেক্টর ছিলেন। যুদ্ধের পরেও গোটা ইউরোপে ত্রাণকাজে জড়িয়ে ছিলেন। রিপাবলিকান পার্টির সদস্য হিসেবে, ১৯২১ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত দেশের বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব সামলানোর পর ১৯২৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু তাঁর শাসনামল জুড়েই থাবা বসায় ভয়াবহ মহামন্দা (গ্রেট ডিপ্রেশন)। এই সংকট সামাল দিতে তাঁর নেওয়া নীতি আর পদ্ধতি অনেকের কাছেই মনে হয়েছিল ঢিলেঢালা আর অকার্যকর। জনপ্রিয়তা হারিয়ে ১৯৩২ সালের নির্বাচনে ফ্র্যাংকলিন ডি. রুজভেল্টের কাছে তিনি চোখে পড়ার মতো হেরে যান।আইওয়া রাজ্যের ওয়েস্ট ব্রাঞ্চে কোয়াকার পরিবারে হুভারের জন্ম। বেড়ে উঠেছিলেন ওরেগনে। ১৮৯৫ সালে তখনকার নতুন প্রতিষ্ঠান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন প্রথমদিককার ছাত্রদের একজন হিসেবেই। লন্ডনের একটা খনি কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে কাজ করতে যান অস্ট্রেলিয়া আর চীনে। খুব দ্রুতই ধনী হয়ে ওঠেন খনি প্রকৌশলী হিসেবে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বাঁধলে, তিনি গড়ে তোলেন এবং নেতৃত্ব দেন 'কমিশন ফর রিলিফ ইন বেলজিয়াম' নামে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার, যা জার্মান দখলদারিত্বের মধ্যে আটকে পড়া বেলজিয়ামের মানুষদের খাবার পৌঁছে দিত। ১৯১৭ সালে আমেরিকা যখন যুদ্ধে নামে, প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তাঁকে খাদ্য বিভাগের দায়িত্ব দেন। পুরো দেশে তখন তিনি পরিচিত হন "খাদ্য নিয়ন্ত্রক" বা "ফুড ডিক্টেটর" নামে। যুদ্ধ শেষে, হুভার এগিয়ে আসেন আমেরিকান রিলিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর নেতৃত্ব দিতে। এই সংস্থা মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ, বিশেষ করে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া রাশিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে সাহায্য করে। যুদ্ধকালীন এই পরিশ্রম তাঁকে অনেক উদারপন্থী নেতার প্রিয়পাত্র বানায়। ১৯২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন।
প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি. হার্ডিং আর ক্যালভিন কুলিজের আমলে হুভার বাণিজ্য সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি ছিলেন অস্বাভাবিক রকম সক্রিয় আর জনগণের চোখে পড়ার মতো মন্ত্রী। এমনকি তাঁকে ডাকা হতো "বাণিজ্য সচিব আর বাকি সব দপ্তরের যেন উপ-সচিব" বলে! বিমান চলাচল আর রেডিও প্রযুক্তির উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৯২৭ সালে মিসিসিপি নদীতে ভয়ানক বন্যা দেখা দিলে ফেডারেল সরকারের ত্রাণ তৎপরতাও তিনিই সামলান। ১৯২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের টিকিট পান এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল স্মিথকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন। ১৯২৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই শেয়ার বাজারে ধ্বস নামে। সেই সূচনা হয় ভয়াবহ মহামন্দার, যা তাঁর পুরো প্রেসিডেন্সিকালেই ছায়া ফেলে থাকে। তিনি মেক্সিকান বংশোদ্ভূত মানুষদের জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর নীতি (Mexican Repatriation) সমর্থন করেন, আর মহামন্দার বিরুদ্ধে তাঁর পদক্ষেপগুলো অনেকের কাছেই দুর্বল আর অপর্যাপ্ত মনে হয়।
মহামন্দার ঘোর অন্ধকারের মধ্যেই ১৯৩২ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ফ্র্যাংকলিন ডি. রুজভেল্টের কাছে তিনি চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন। প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর হুভারের অবসর জীবন কাটে ৩১ বছরেরও বেশি সময় ধরে – আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ প্রেসিডেন্টিয়াল অবসরের একটি। অবসরে তিনি অনেক বই লিখেন এবং ক্রমেই আরও রক্ষণশীল হয়ে ওঠেন। রুজভেল্টের বৈদেশিক নীতি আর 'নিউ ডিল' কর্মসূচির তিনি ছিলেন কড়া সমালোচক। তবে ১৯৪০ আর ১৯৫০-এর দশকে জনমত আবার তাঁর দিকে ঘুরে আসে। এর পেছনে বড় কারণ, প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান আর ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ারের আমলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন – যেমন প্রভাবশালী হুভার কমিশন-এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করা। ইতিহাসবিদ আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মূল্যায়নে সাধারণত তাঁকে গড়পড়তা প্রেসিডেন্টদের চেয়ে নিচে রাখেন। তবে একজন মানবহিতৈষী আর জনসেবক হিসেবে তাঁর অবদানের জন্য তিনি আজও অনেক প্রশংসা পান। উইকিপিডিয়া দ্বারা উপলব্ধ